ঢাকাবৃহস্পতিবার , ১৯ মার্চ ২০২০
  1. অন্যান্য ⇓
  2. অপরাধ
  3. অর্থনীতি
  4. আন্তর্জাতিক
  5. ইসলাম
  6. এক্সক্লুসিভ
  7. ক্যাম্পাস
  8. খেলাধুলা
  9. জাতীয়
  10. প্রচ্ছদ
  11. প্রবাস
  12. প্রযুক্তি
  13. ফিচার
  14. বিনোদন
  15. মতামত

চীন যেভাবে করোনা-সংকট কাটিয়ে উঠল

রজনী
মার্চ ১৯, ২০২০ ৮:০০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

শাহীদুল ইসলাম

চীন থেকে করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় ব্যাপকভাবে সমালোচিত হচ্ছে চীন। বিশেষ করে পশ্চিমা গণমাধ্যম এবং রাজনীতিকরা এ ঘটনায় প্রথম থেকেই  চীনের দিকে অঙুল তুলেছেন। তারা চীনের সমাজতান্ত্রিক ধাঁচের শাসন ব্যবস্থা এবং ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট শাসক দলকে দোষারোপ করছেন। তাদের ভাষ্যমতে, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় চীন সরকার যথেষ্ঠ পদক্ষেপ নেয়নি। তবে বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা।

 

কারণ চীন প্রথম থেকেই ভাইরাসটির বিরুদ্ধে দৃঢ় মনোবলে বুক চিতিয়ে লড়াই করছে। প্রকৃতপক্ষে চীন শুরু থেকেই যদি পরিস্থিতি কঠোরভাবে সামাল না দিত, তাহলে বিশ্ব পরিস্থতি হয়ত আরও ভয়াবহ হতো। যদিও প্রতিদিনই নতুন নতুন অঞ্চলে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ছে। তবে ভাইরাস শনাক্তকরণ স্থান চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে এর প্রকোপ অনেকটাই কমে এসেছে। মোটকথা চীনের পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে- একথা বলা যায়। কিন্তু কীভাবে এই অসাধ্য সাধন করেছে চীন? যেখানে বিশ্বের অনেক উন্নত রাষ্ট্র করোনাভাইরাস মোকাবিলায় রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে চীন সংক্রমণ শুরুর অড়াই মাসের মাথায় ভয়াবহ এই পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দিলো!

 

বর্তমানে যদিও পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো চীনের বন্দনা গাইছে। কেউ কেউ চীনকে বাহবা দিচ্ছে! খতিয়ে দেখছে চীনের গৃহীত পদক্ষেপগুলো। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে আক্রান্ত দেশগুলোকে ওইসব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করছে তারা। কোন কোন পদক্ষেপ চীন করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছে পশ্চিমা গণমাধ্যম ‘এবিসি নিউজ’। চীনফেরত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তৈরি করা তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে পত্রিকাটি বেশ কয়েকটি পদক্ষেপের ওপর আলোকপাত করেছে।

 

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়েছিল চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে। শুরুর দিকে ধারণা করা হয়েছিল, গোটা চীনে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়বে। তবে চীন উহানের মধ্যেই ভয়াবহ পরিস্থিতি সীমাবদ্ধ রাখতে পেরেছে। তাদের আগ্রাসী প্রচেষ্টায় ভাইরাস গোটা চীনে সংক্রামিত হয়নি। যদিও শুরুতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছিল। তবে ভাইরাসটি যেহেতু নতুন, তাই শুরুতে এর প্রভাব বুঝে উঠতে পারেনি চীনা চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা। ফলে ভয়াবহতা বুঝে উঠতে দেরি হয়েছে এবং সে কারণে পদক্ষেপ নিতেও কিছুটা বিলম্ব হয়েছে।

 

বিলম্ব হলেও আক্রান্ত রোগীদের সেবা-শুশ্রুষা এবং নতুন করে আক্রান্ত হওয়া ঠেকাতে চীন অভিনব কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রথমেই তারা আক্রান্ত ও ঝুঁকিতে থাকা লোকদের আলাদা করে ফেলেছে। আক্রান্তদের চিকিৎসায় পুরাতন কোন হাসপাতাল তারা ব্যবহার করেনি। মাত্র ছয়দিনে একহাজার শয্যাবিশিষ্ট একটি হাসপাতাল তৈরি করেছে। যা বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুত হাসপাতাল তৈরির রেকর্ড।২০০৩ সালে সার্সে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য চীন সরকার বেইজিংয়ে শিয়াওটাংশান হাসপাতাল নির্মাণ করেছিল। এই হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছিল সাত দিনে, যা ওই সময়ের রেকর্ড। এছাড়া পুরাতন হাসপাতালগুলোতে শত শত আলাদা ইউনিট তৈরি করেছে তারা। উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা নাগরীকদের সরকারি ব্যবস্থাপনায় কোয়ারেন্টাইন এবং কম ঝুঁকিতে থাকা নাগরিকদের হোম কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করেছে।

 

এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া, গণ পরিবহন পরিহার করতে পরামর্শ দেওয়া, সংকটাপন্ন এলাকাগুলোতে নিয়মিত বিরতিতে জীবাণানাশক ছিটানো, সকল নাগরিককে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে কঠোরতা অবলম্বন করেছে চীন সরকার। ফলে নতুন করে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি যেমন কমেছে, তেমনি কমেছে মৃত্যু ঝুঁকি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি দলের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, তারা যখন ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে চীন ত্যাগ করে তখন নতুন করে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ২০৬ জন। বর্তমানে এই হার কমেছে।

 

এরপর রয়েছে চীন সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ। কৌশলগত চিন্তাভাবনা এবং সরকারের সব অংশকে সচল রাখা। চীনে সরকার পরিচালনা পদ্ধতিতে শীর্ষ থেকে নিচে বা টপ-ডাউন মোবিলাইজেশন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়ে থাকে। যে কারণে তারা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এড়িয়ে এবং আর্থিক সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে তাদের সব প্রচেষ্টা নির্দিষ্ট দিকে নিয়োগ করতে পারে। করোনাভাইরাস যখন নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছিল তখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে অন্যান্য হাসপাতালের নার্স ও চিকিৎসকদের আক্রান্ত এলাকায় এসে কাজ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। হাতে কলমে শেখানো হয়েছিল কীভাবে সংক্রামক রোগ মোকাবিলা করতে হবে। এসব ডাক্তার ও নার্সদের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে আলাদা প্রনোদনা। এছাড়া সকল ব্যয়ভার স্থানীয় সরকার কর্তৃক মেটানো হলেও রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকেও প্রচুর পরিমাণ ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে। যা আক্রান্তদের চিকিৎসা, ডাক্তার-নার্সদের বেতন ও অন্যান্য কাজে ব্যয় করা হচ্ছে।

 

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মোকাবেলায় চীন সরকারের দৃঢ় মনোবল ও গৃহীত পদক্ষেপ দেখে ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিসের অধ্যাপক মার্টিন জ্যাকুইস বলেন, জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় চীনের সক্ষমতা পশ্চিমা যে কোনো সরকারের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত এবং অনেক বেশি কার্যকরী। চীনের নীতি এবং চীনের সরকার এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় অন্য সরকারের চেয়ে অনন্য। এই মুহূর্তে বিশ্বের উচিত চীনের ভাইরাস মোকাবিলার এই পদক্ষেপগুলো মেনে চলা।