ঢাকাবুধবার , ২০ জানুয়ারি ২০২১
  1. অন্যান্য ⇓
  2. অপরাধ
  3. অর্থনীতি
  4. আন্তর্জাতিক
  5. ইসলাম
  6. এক্সক্লুসিভ
  7. ক্যাম্পাস
  8. খেলাধুলা
  9. জাতীয়
  10. প্রচ্ছদ
  11. প্রবাস
  12. প্রযুক্তি
  13. ফিচার
  14. বিনোদন
  15. মতামত

অক্সিজেন ও করোনাকালীন বন্ধুতা : শাখাওয়াত সজীব

বাংলানিউজ/এ
জানুয়ারি ২০, ২০২১ ১:৫৯ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

শাখাওয়াত সজীব : ২০২১ সালের মার্চ মাসের মধ্যভাগ, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ বড়সড় একটা ধাক্কা দেয়ার পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে ভারতে হানা দেয়! কল্পনাতীতভাবে দ্রুত গতিতে তা পুরো ভারতে ছড়িয়ে পরে। আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা দ্রুত গতিতে বাড়তে থাকে। করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর প্রতিদিনের হিসেব বুঝি পরের দিনকে টপকে যাবার এক ভয়ানক খেলায় মেতে উঠে। দেশটিতে এপ্রিল এবং মে মাসে আক্রান্ত ও মৃতের হার সবকিছুকে ছাপিয়ে যায়। দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় চার লাখ অতিক্রম করে এবং মৃত্যুর সংখ্যাটাও দৈনিক ৪ হাজারের উপরে চলে যায়। মে মাসের শুরুর দিকে ভয়াবহতা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে যে শ্মশান ঘাটেগুলোতে শবদাহ করে পেরে উঠছিলেন না স্বজনরা। চারদিকে মানুষের হাহাকার আর আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠেছিলো ভারত। করোনার ওই ধাক্কার মধ্যে ভারতের স্বাস্থ্য খাতের দুর্বলতার দিকগুলো নিয়ে অনেকেই তখন কথা বলতে শুরু করে এবং  হাসপাতালের শয্যা ও অক্সিজেনের জন্য হাজারো মানুষের হাহাকার বিশ্বের নজর কাড়ে। এ সময় ভারতে এক দিনে শনাক্ত করোনা রোগীর সংখ্যা বিশ্বের কোনো দেশে এক দিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড গড়ে। প্রতিদিন মৃত্যুও হয় তিন-চার হাজার মানুষের। এমন পরিস্থিতিতে ভারতের পাশে এসে দাঁড়ায় গোটা বিশ্ব। বাংলাদেশে যে পরিমাণ অক্সিজেন রপ্তানি করতো ভারত তখন স্বাভাবিকভাবেই সেই রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশ সরকারও তার সামর্থ্যের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে ভারতের পাশে দাঁড়ায়। মে মাসের শুরুতে ১০ হাজার ভায়াল অ্যান্টিভাইরাল ইনজেকশন, ওরাল অ্যান্টিভায়াল, ৩০ হাজার পিপিই কিট, সাত হাজার জিংক, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ‘সি’ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় ট্যাবলেট ভারতকে পাঠানো হয়। অবনতিশীল কোভিড পরিস্থিতি মোকাবেলায় তা ছিলো পারস্পরিক বন্ধুত্বের স্মারক। ধীরে ধীরে অবস্থার পরিবর্তন ঘটে এবং ভারত এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসছে। কোভিড পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হয়েছে। আর তাই অক্সিজেন রপ্তানি পুনরায় শুরু করেছে ভারত। 

ভারতের পরিস্থিতি যখন কিছুটা ভালোর দিকে যাচ্ছে তখন আবার বাংলাদেশের পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছিলো। তখন খুব দ্রুতই ভারত সরকার ‘অক্সিজেন এক্সপ্রেস’ ট্রেনের মাধ্যমে তরল অক্সিজেন সরবরাহের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। করোনা পরস্থিতি মোকাবেলায় এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের মানুষের জন্য এক দারুণ সুখবর। ভারতের করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হবার পর গত ২৪ জুলাই ভারত থেকে আমদানি করা ২০০ মেট্রিকটন তরল অক্সিজেন নিয়ে বেনাপোল বন্দরে পৌঁছায় ‘অক্সিজেন এক্সপ্রেস’৷এটি ছিলো অক্সিজেন এক্সপ্রেসের দ্বিতীয় চালান। এর তিনদিন পর ২৮ জুলাই ভারতীয় রেলওয়ের ‘অক্সিজেন এক্সপ্রেস’ আরো ২০০ মেট্রিক টন তরল মেডিকেল অক্সিজেন নিয়ে সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছে বাংলাদেশে এসেছে। ভারত অক্সিজেন পরিবহনে ২০২১ সালের ২৪ এপ্রিল ‘অক্সিজেন এক্সপ্রেস’ নামে এই বিশেষ ট্রেন পরিসেবা চালু করে। ভারতে মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে অক্সিজেন সংকট দেখা দিলে সেখান থেকে অক্সিজেন রপ্তানি বন্ধ ছিল। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে ৫ জুলাই আবার অক্সিজেন পাঠানো শুরু করে। এই জুলাই মাসে বাংলাদেশের অক্সিজেনের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিলো। সেই সময়টিতে বন্ধুরাষ্ট্র ভারত আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে যেমন করে করোনাকালীন সময়টাতে সর্বক্ষণ দুই দেশ একে অপরের পাশে রয়েছে।  এখানেই শেষ না, গত ১৭ আগস্ট ২০২১ ভারত সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে হাই কমিশনার শ্রী বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভারতে তৈরি ৩১টি লাইফ সাপোর্ট অ্যাম্বুলেন্স ও প্রায় ২০ টন প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী বাংলাদেশ সরকারের কাছে হস্তান্তর করেন। ২০২১ সালের মার্চ মাসে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরকালে বাংলাদেশ সরকারকে ১০৯ টি লাইফ সাপোর্ট অ্যাম্বুলেন্স উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পূরণের অংশ হিসেবে প্রথম চালানের অ্যাম্বুলেন্সসমূহ হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি অ্যাম্বুলেন্সগুলিও শীঘ্রই পাঠানো হবে। এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এই এম্বুলেন্সের পাশপাশি আরো বেশ কিছু চিকিৎসা সামগ্রীও ভারত সরকার দিয়েছে। প্রদত্ত চিকিৎসা সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে অক্সিজেন ন্যাজাল ক্যানুলা, অক্সিজেন ফেস মাস্ক, অক্সিজেন ফ্লো মিটার, নন-রিব্রিদার মাস্ক, পালস অক্সিমিটার ডিভাইস, হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা, ১০ লিটার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন তরল মেডিকেল অক্সিজেন সিলিন্ডার, ৪৫ লিটার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এলএমও সিলিন্ডার, অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর এবং ইনফ্রা থার্মোমিটার। এই অ্যাম্বুলেন্সগুলি চলমান কোভিড মহামারী মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের ব্যাপক প্রচেষ্টায় সহায়তা করার উদ্দেশ্যে প্রদান করা হয়েছে। এমনকি মহামারীর পরেও, অ্যাম্বুলেন্সগুলি জনস্বাস্থ্য পরিষেবা উন্নয়নে বাংলাদেশের চলমান এবং দৃঢ় প্রচেষ্টায় সহায়ক হবে। এই উপহার বাংলাদেশের জনগণের সাথে অনন্য এবং বিশেষ বন্ধুত্বের প্রতি ভারতের অবিচল এবং দীর্ঘমেয়াদী অঙ্গীকারকে প্রতিফলিত করে।

মহামারিকালীন সময়ে এক ভিন্ন মৈত্রী স্থাপিত হয়েছে ভারত-বাংলাদেশ এর মাঝে। ‘আঁধার ঘুচুক, পরশ থাকুক হৃদয় ভরা’ এই স্লোগানকে ধারণ করে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ভারতের সহযোগিতা আসে বাংলাদেশে। করোনা মোকবেলায় এক নতুন মৈত্রীতার শুরু করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুরুতেই ৩০ হাজার সার্জিক্যাল মাস্ক এবং ১৫ হাজার হেড-কভার সমন্বিত জরুরি চিকিৎসা সহায়তা পাঠানো হয়। এছাড়াও করোনা সংক্রমণ বিস্তার রোধে ডাক্তার, নার্সদের আলাদা প্রশিক্ষণ চালু করেছে ভারত সরকার যেখানে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিতদের আলাদা প্রশিক্ষণও তারা দিচ্ছেন। এখানেই থেমে নেই দুই দেশের বন্ধুতা, টিকা আবিস্কারের পর খুব দ্রুততার সাথে সেরাম ইন্সটিটিউট থেকে অক্সফোর্ড অস্ট্রেজেনেকার টিকা পায় বাংলাদেশ। এবং উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে একই সময়ে টিকাকরণ প্রক্রিয়া চালু করে কেবল ভারত সরকারের জন্যই। টিকা যখন সোনার হরিণ তখন ভারত সরকার ৩৩ লাখ ডোজ টিকা উপহার দেয় বাংলাদেশকে যা বন্ধুত্বের এক অপার নিদর্শন। এখনো দুই দেশের মাঝে করোনাকালীন সহায়তা চলমান রয়েছে। 

দক্ষিণ এশিয়ায় করোনা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ভারত। আর এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আলাদা গুরুত্ব দিয়েছে তারা। বাংলাদেশের যে কোনও জরুরী পরিস্থিতিতে ভারত সর্বপ্রথমে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এসেছে কারণ বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্ব কৌশলগত সম্পর্কের ঊর্ধ্বে। আর তার শুরু বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই। তাই জনস্বাস্থ্য বিষয়ক যে কোনও জরুরী পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার এবং জনগণের নিজস্ব প্রচেষ্টায় যথাসাধ্য সমর্থন ভারত যে অব্যাহত রাখবে তা অনুমেয়ই ছিলো। আমরা চাই, এই সমর্থন হোক টেকসই, জনকেন্দ্রিক এবং বন্ধুদেশের সর্বোত্তম স্বার্থে। 

লেখক: সাংবাদিক।