ঢাকাশনিবার , ২৫ এপ্রিল ২০২০
  1. অন্যান্য ⇓
  2. অপরাধ
  3. অর্থনীতি
  4. আন্তর্জাতিক
  5. ইসলাম
  6. এক্সক্লুসিভ
  7. ক্যাম্পাস
  8. খেলাধুলা
  9. জাতীয়
  10. প্রচ্ছদ
  11. প্রবাস
  12. প্রযুক্তি
  13. ফিচার
  14. বিনোদন
  15. মতামত

সকল বিস্ময় মুছে দিয়ে এমন ‘মানুষ’কে-‘মানুষ’ই বলতে চাই

রজনী
এপ্রিল ২৫, ২০২০ ২:১৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সীমান্ত হেলাল।।

বিশ্ব মানবতা যখন করোনার প্রকোপ বিপন্ন! যখন থমকে গেছে জনজীবন! যখন সবাই নিজেকে বাঁচানোর তাগিদে ঘরবন্ধি! যখন পরিবার পরিজনকে বাঁচাতে বইছে সচেতনতার জোয়ার! যখন প্রাণঘাতী করোনার সংক্রমনরোধে শারীরিক দুরত্ব থেকে আমরা মধ্যযূগীয় সামাজিক দুরত্বে চলে যাচ্ছি! পৃথিবীজুড়ে যখন মৃত্যুর মিছিল! যখন বাবা পালিয়ে যাচ্ছে সন্তানের লাশ ফেলে; সন্তান পালিয়ে যাচ্ছে বাবার লাশ ফেলে! যখন মৃত্যুভয়ে আমাদের আপনজন কিংবা সুস্থ সবল কারো কাছ থেকেও আমরা চলে যাচ্ছি যোজন যোজন দুরত্বে! ঠিক তখনই করোনা সনাক্ত রোগীর কাছে ছুটে গেলেন মনপুরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপুল চন্দ্র দাস।

 

এই প্রথম ভোলা জেলায় দু’জন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হলো। তন্মধ্যে একজন মনপুরার বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার রাতে মনপুরায় একজনের করোনা শনাক্তের খবর আসে। খবর পেয়েই সকল ভীতি উপেক্ষা করে; ছোঁয়াচে করোনার ভয়াবহ গায়ে না মাখিয়ে তিনি সেই রাতেই ছুটে গেলেন করোনা আক্রান্ত রোগীর বাড়িতে! রাতেই রোগীকে নিয়ে এলেন আইসোলেশনে। এ যেন বিপন্ন মানবতার অমোগ আহবান! এ যেন মৃত্যু পথযাত্রী মানুষকে বাঁচানোর পরম আকুতি! যেন আবারো সত্যি হয়ে গেলো সেই কালজয়ী গান-“মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য”!

 

একজন করোনা আক্রান্ত মানুষকে বাঁচাতে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে উপজেলা প্রশাসনের দায়-বা কতটুকু! লাখো মানুষের দায়িত্ব নেয়া মানুষটি আর কতটুকুই বা নিতে পারেন একজন করোনা আক্রান্ত মানুষের! যেখানে দুরত্ব বজায় রাখাটা মুক্তির মহামন্ত্র সেখানে তিনিই-বা কতটুকু গা ঘেঁশার সাহস রাখেন! তবু তিনি রেখেছেন! অসীম সাহস বা মানবতার সেবায় মেলে মুক্তি। এই সাহস নিয়ে করোনা আক্রান্ত রোগীর কাছে ছুটে গেলেন একজন ইউএনও।

 

“কাজের মাধ্যমে নিজেকে যতটা সাধারন করে মানুষের কাছে উপস্থাপন করা যায়; সম্ভবত মানুষ ততটাই অসাধারন হয়ে ওঠে।” এই কথা হয়ত মনে প্রাণে জানেন তিনি। জানামতে, মনপুরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাবা-মা রয়েছেন গ্রামের বাড়িতে, পরিবার-সন্তান রয়েছেন অন্যস্থানে! আর সকলের মায়া ত্যাগ করে মানবতার সেবা কিংবা দায়িত্ব পালনের কাজে নিজে রয়ে গেছেন দ্বীপ জেলার আরেক বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরায়!

 

বিশ্বায়নের এই নোংরা প্রতিযোগিতার যুগে ‘মানুষ’কে-‘মানুষ’ বলতে পারাটাই এখন বিস্ময়! “তবু মানুষ কখনো হয়না দানব”! মানুষের ডাকে মানুষই সাড়া দেয়। তেমনটি সাড়া দিয়েছেন মনপুরার ইউএনও।

 

আইসোলেশনে তখন মানুষটি চরম একা! বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন সব যখন দুরে সরে রয়েছে। কারো সাথে যখন কোন সাক্ষাৎ করার সুযোগ নেই। তখন হাজার ওয়াট বৈদ্যুতিক বাতির নিচেও নিজের শরীর দেখতে কষ্ট হচ্ছে। চোখে মুখে ঘোর অন্ধকার! ঠিক তখনই করোনা আক্রান্ত অসহায় মানুষটির খোঁজ নিলেন ইউএনও। জানতে চাইলেন, কেমন আছেন, ঠিকমত খাচ্ছেন কিনা, ফল খাচ্ছেন কিনা, গরম পানি আছে কিনা, শরীর কেমন আছে ইত্যাদি । তিনি এ ও বললেন, কোন অসুবিধা হলে সরাসরি আমাকে টেলিফোন করবেন।

 

এছাড়াও শোয়ার বিছানার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। রাতে শীতের জন্য কম্বল দিয়েছেন। এরপর জানতে পারলেন, তার ফোনে বাবা-মা’র সাথে কথা বলার মতো টাকা নেই। এই কথা শুনে সাথে সাথে ফ্লেক্সিলোড করে দিয়েছেন।

 

যেখানে সাড়াবিশ্ব মৃত্যুপুরী! যেখানে আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সরকারের নির্দেশ মেনে নিজ গৃহে অন্তরিন রয়েছি। কিংবা মরণব্যাধী করোনার ভয়ে বের হচ্ছি না! ঠিক তখন অসহায় বিপন্ন মানবতার আহবানে সাড়া দিয়ে প্রতিনিয়ত বের হচ্ছেন! ত্রাণ বিতরণ করছেন। মানুষকে সচেতনতায় প্রচারনা চালাচ্ছেন। প্রশাসনিক কর্মকান্ড পরিচালনা করছেন। প্রয়োজনমতো হোম কোয়ারেন্টাইন, লকডাউন নিশ্চিৎ করছেন। সকল ভয়ভীতি উপেক্ষা করে যেখানে প্রয়োজন সেখানে ছুটে যাচ্ছেন। অইনশৃঙ্খলা রক্ষায় একেকটা সফল অভিযান পরিচালনা করছেন।

 

তিনি একজন দক্ষ প্রশাসক। তিনি কোন বাবার সন্তান অথবা নিজে কারো বাবা। কোন মমতাময়ী মায়ের আদরের ছেলে অথবা কোন প্রেয়সীর কপালের লাল টিপ। সব পরিচয় মুছে দিয়ে তিনি একজন মানুষ। সকল বিস্ময় মুছে দিয়ে এমন ‘মানুষ’কে-মানুষই বলতে চাই। জানাতে চাই স্বশ্রদ্ধ সালাম। আর আন্তরিক ভালোবাসা ব্যতীত কি-বা দেয়ার আছে আমাদের!